মানুষের শরীরের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে এর সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে কাজ করা না করার বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করে হরমোন গ্রন্থিগুলোর ঠিকঠাক কাজের ওপর। দুশ্চিন্তা থেকে শুরু করে বড় বড় বহু রোগের সঙ্গে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সম্পর্ক রয়েছে। এই হরমোনের নিঃসরণ ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অনেক সংকটেরই দ্রুত সমাধান হওয়া সম্ভব। আর এই হরমোনের দূর নিয়ন্ত্রণের কৌশলটিই আবিষ্কার করে ফেলেছেন এক দল গবেষক।
এই গবেষণা ভবিষ্যতে শুধু মানসিক স্বাস্থ্যই নয়, ব্যথাসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার সমাধানের পথও দেখাবে বলে আশা করছেন গবেষকেরা।
মানুষের শরীরের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে এর সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে কাজ করা না করার বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করে হরমোন গ্রন্থিগুলোর ঠিকঠাক কাজের ওপর। দুশ্চিন্তা থেকে শুরু করে বড় বড় বহু রোগের সঙ্গে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সম্পর্ক রয়েছে। এই হরমোনের নিঃসরণ ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অনেক সংকটেরই দ্রুত সমাধান হওয়া সম্ভব। আর এই হরমোনের দূর নিয়ন্ত্রণের কৌশলটিই আবিষ্কার করে ফেলেছেন এক দল গবেষক।
এই গবেষণা ভবিষ্যতে শুধু মানসিক স্বাস্থ্যই নয়, ব্যথাসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার সমাধানের পথও দেখাবে বলে আশা করছেন গবেষকেরা।
হরমোন গ্রন্থিকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটা চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য অনেক বড় এক অগ্রগতি। উদাহরণ দেওয়া যাক। বাড়তি চাপের সময় দেখা যায় শরীরে বিশেষ এক ধরনের হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। মানসিক এই দশাটির সঙ্গে অ্যাড্রেনালিন, কর্টিসলের মতো বেশ কয়েকটি হরমোন জড়িত। শুধু বাড়তি চাপই নয় পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের (পিটিএসডি) মতো জটিল মানসিক সমস্যার সঙ্গেও এগুলো যুক্ত। তাই এই হরমোনগুলোর নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে, তা এসব রোগের চিকিৎসায় বড় অবদান রাখবে। আর এই কাজটিই করেছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) এক দল গবেষক। এক ধরনের চুম্বকীয় ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহার করে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে সংশ্লিষ্ট হরমোনগুলো নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হয়েছে দলটি।
গবেষণাটি সম্পর্কে এমআইটির ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্সেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও ব্রেইন অ্যান্ড কগনিটিভ সায়েন্সেসের অধ্যাপক পলিনা অ্যানিকিভা বিজ্ঞান-বিষয়ক পত্রিকা সায়েন্স ডেইলিকে বলেন, ‘এর মাধ্যমে এখন মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিভিন্ন হরমোনের প্রভাব আরও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে হরমোন-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা আগের চেয়ে অনেক সহজ হবে। শরীরের স্নায়ুতন্ত্রে হস্তক্ষেপ না করেই কী করে বিভিন্ন মানসিক রোগের চিকিৎসা করা যায়, তা নিয়েই আমরা কাজ করছিলাম।’
হরমোনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে অ্যানিভিকার দলের সদস্য ও এমআইটির পোস্টডক পর্যায়ের গবেষক ডেকেল রোসেনফিল্ড একটি ম্যাগনেটিক ন্যানোপার্টিকল তৈরি করেন, যা এতটাই ক্ষুদ্র যে, তা অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিতে প্রবেশ করানো যায়। এর ক্রিয়া পদ্ধতি হচ্ছে, যখনই ওই অতি ক্ষুদ্র বিশেষ যন্ত্রটি কোনো দুর্বল চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে আসবে, তখনই তা কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। আর এই উত্তাপই সংশ্লিষ্ট গ্রন্থিটিতে হরমোন নিঃসরণের সংকেত পাঠাবে।
এ সম্পর্কিত গবেষণা নিবন্ধটি সায়েন্স অ্যাডভান্স গবেষণা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে গত ১৭ এপ্রিল। এতে রোসেনফিল্ড ও অ্যানিকিভার পাশাপাশি সহলেখক হিসেবে ছিলেন মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলিক উইজ।
উল্লেখ্য, পলিনা অ্যানিকিভার পরীক্ষাগারেই এবং তাঁর নেতৃত্বেই এর আগে নতুন ধরনের ন্যানো-বোট তৈরি হয়েছিল, যা শরীরের ভেতরে সুনির্দিষ্ট অংশে গিয়ে ওষুধ প্রয়োগ করতে পারবে।
নতুন এই গবেষণায় গবেষকেরা চেষ্টা করেছেন মস্তিষ্ক সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে। এ ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব রাখে এমন কিছুকে তাঁরা ব্যবহার করতে চাইছিলেন। আর এ চাওয়া থেকেই হরমোনের বিষয়টি সামনে আসে। এটি করতে গিয়ে রোসেনফিল্প যে ন্যানো বোট তৈরি করেছেন, তার আকার মানুষের চুলের পাঁচ হাজার ভাগের এক ভাগ। এই ন্যানো বোট পরীক্ষামূলকভাবে ইঁদুরের শরীরের অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিতে স্থাপন করেন গবেষকেরা। পরে ইঁদুরটিকে দুর্বল চৌম্বক ক্ষেত্রের কাছে নিয়ে পদ্ধতিটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে সফল হন। দেখা যায়, চৌম্বক ক্ষেত্রের সংস্পর্শে আসার পরপরই সংশ্লিষ্ট ইঁদুরের শরীরে অ্যাড্রেনালিন নিঃসৃত হচ্ছে।