রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের অধিকাংশ তৈরী পোশাক কারখানা গতকাল খুলেছে। শ্রমিকের উপস্থিতি তুলনামূলক কম হলেও কাজ হয়েছে প্রায় সব বিভাগেই। অবশিষ্ট কারখানাগুলোও খোলার প্রক্রিয়া চলছে। যদিও বিজিএমইএ-বিকেএমইএ ঘোষণা দিয়েছে, কাজ হবে নির্ধারিত কিছু বিভাগে। অবশিষ্ট কারখানাগুলো খোলা হবে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ধাপে। অভিযোগ উঠেছে, কারখানার মালিকরা চাপ না দিলেও চাকরি হারানোর আশঙ্কা কাটাতে কাজে যোগদানের উদ্দেশ্যে গ্রামে অবস্থানকারী প্রায় সব শ্রমিকই পুনরায় ঢাকামুখী হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এর আগে তীব্র সমালোচনার মুখে সরকারি ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের সব পোশাক কারখানা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে পোশাক মালিকদের বড় দুটি সংগঠন বিজিএমইএ) ও বিকেএমইএ।
বিভিন্ন পর্যায়ের কারখানার মালিক ও শ্রমিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী মহামারীর মধ্যেও অনেক পোশাক কারখানার ক্রয়াদেশ বহাল রয়েছে। এসব অর্ডার যেন বাতিল না হয় তাই কারখানা খুলে দেয়ার জন্য সরকার ও সমিতিকে চাপ দিতে থাকেন পোশাক কারখানার মালিকরা। বিষয়টি বিবেচনায় সরকারের অনুমতিতে প্রথমে সীমিত আকারে চালু করা হয় কিছু পোশাক কারখানা। প্রথমাবস্থায় ঢাকা শহর ও এর আশপাশের কারখানা চালু হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল অনেক এলাকার কারখানাই খুলেছে। তবে শ্রমিকের উপস্থিতি কম হওয়ায় অনেক কারখানায় তেমন কোনো কাজ হয়নি বলে জানা গেছে।
জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় এফবিসিসিআই নেতাদের সাথে আলোচনার পর হঠাৎ করেই পোশাক কারখানাগুলো অংশিকভাবে খোলার সিদ্ধান্ত নেন বিজিএমইএ নেতারা। বিষয়টি অবহিত করে রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি পাঠায় বিজিএমইএ। এর কারণ হিসেবে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, প্রতিযোগি দেশগুলোতে যদি অর্ডার চলে যায় তাহলে তা ফেরত আনা কঠিন হবে। তাই সীমিত শ্রমিক নিয়ে সীমিত আকারে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি। একই সিদ্ধান্ত নেয় পোশাক শিল্প মালিকদের অপর সংগঠন বিকেএমইএ। এরপর শ্রম মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালুর জন্য একটি নির্দেশনা জারি করে।
২৫ এপ্রিল রাতে বিজিএমইএ সদস্যদের উদ্দেশে পাঠানো এক নির্দেশনায় কারখানা খোলার বিষয়ে বলা হয়, অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে সামগ্রিক বিবেচনায় বিজিএমইএ আপনাদের জোনভিত্তিক সীমিত পরিসরে কারখানা খোলার পরামর্শ দেবে। এর আগে শ্রমিকদের ঢাকায় না আনার পরামর্শ দেয়া হলো। সেসব কর্মী নিয়ে কারখানা চালু করুন যারা কারখানার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করেন। শ্রমিক ছাঁটাই না করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, মানবিক কারণে শ্রমিকদের ছাঁটাই না করার জন্য সদস্যদের অনুরোধ করা যাচ্ছে। অনুপস্থিত শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বেতন পৌঁছে দেয়া হবে।
বিজিএমইএর নির্দেশনায় আরো বলা হয়, পরামর্শ অনুযায়ী কারখানা খোলার তারিখ ও প্রটোকল দৃঢতার সঙ্গে প্রতিপালনের অনুরোধ করছি। যেকোনো পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা নিয়মবহির্ভূতভাবে ঢাকায় চলে আসলে সংগঠন হিসেবে আমাদের পক্ষে কোনো সহযোগিতা করা সম্ভব হবে না।
বিজিএমইএ-বিকেএমইএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারখানাগুলো তিন ধাপে খোলার কথা। প্রথম পর্যায়ে রোববার ও সোমবার ঢাকা মেট্টোপলিটন এলাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ এলাকার নিটিং, ডায়িং ও স্যাম্পলিংয়ের কারখানা চালু হওয়ার কথা। ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের কারখানা, ৩০ এপ্রিল রূপগঞ্জ, নরসিংদী, কাঁচপুর এলাকা, ২ ও ৩ মে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ এলাকার কারখানা চালু করার কথা। কারখানা খোলার ক্ষেত্রে কথা ছিল শুরুতে উৎপাদন ক্ষমতার ৩০ শতাংশ চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে। তবে এখন কোনো শ্রমিককে ঢাকার বাইরে থেকে নিয়ে আসতে পারবেন না কারখানার মালিকরা। গতকাল এসব সিদ্ধান্তে অনেকাংশই ব্যাত্যয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।